বুধবার, ৩১ মে ২০২৩, ১০:১৬ পূর্বাহ্ন

অভাব দূর করতে গিয়ে গুলিতে লাশ হলেন বাঁশখালীর মাহমুদ

প্রশাসন / ৪০ বার পঠিত
সময়: রবিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২১, ৭:০৯ অপরাহ্ণ

‘ঘরর অভাব দূর গইত্তো যাই চ’রি লই লাশ অইয়ে আঁর পোয়া। ইতে আগামীবার দাখিল পরীক্ষা দিবার হথা। ঘরর অভাবও দূর নঅইল, পরীক্ষাও দিত নুপারিল আঁর পোয়া। ঘরর এদুগুন কর্জ লই আঁই হন্ডে যাইয়ুম, কী গইজ্জুম (সংসারের অভাব দূর করতে গিয়ে চাকরি নিয়ে লাশ হলো আমার ছেলে। আগামী বছর তার দাখিল পরীক্ষা দেওয়ার কথা। অভাব দূর হলো না, পরীক্ষাও দিতে পারল না আমার ছেলে। এত ঋণ নিয়ে আমি কোথায় যাব, কী করব)।’ এসব বলে বিলাপ করছিলেন চট্টগ্রামের বাঁশখালীর গন্ডামারায় সংঘর্ষের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত মাহমুদ রেজা ওরফে মীর খানের (১৮) মা নূরাইন জান্নাত।

গতকাল শনিবার সকালে বাঁশখালীর গন্ডামারায় সংঘর্ষের সময় পুলিশের গুলিতে মাহমুদসহ পাঁচ শ্রমিক নিহত হন। রোববার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে বাঁশখালী উপজেলার গন্ডামারা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব বড়ঘোনা গ্রামের আহমদ আলী মিয়াজী বাড়িতে নিহত মাহমুদ রেজার ঘরে গিয়ে দেখা যায়, মাহমুদের মা ও তিন বোন বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। তখনো লাশ আনা হয়নি। বাড়িতে ভিড় জমিয়েছেন প্রতিবেশীরা। সবার চোখেমুখে ক্ষোভ আর হতাশা।

মাহমুদ রেজার মা নূরাইন জান্নাত বলেন, তাঁর ছেলে কোরআনে হাফেজ। তিনি আগামীবার দাখিল পরীক্ষা দিত। লকডাউনে ঘরের অভাব মেটাতে ১৬ হাজার টাকা মজুরিতে শ্রমিকের কাজ নেন তিনি। এখন সব শেষ।

মাহমুদ রেজার ভাই আহমদ রেজা (২০) বলেন, ‘তিন বোনের বিয়ে দিতে গিয়ে বহু ঋণ হয় মা-বাবার। দুই বছর আগে বাবাও মারা গেলে সীমাহীন বিপদে পড়ি আমরা। এরপরও মা বড় ভাইকে ঋণ করে ওমান পাঠান। কিন্তু সেখানে সে ভালো চাকরি না পাওয়ায় আয়–রোজগার তেমনটা হতো না। আমিও শহরের একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করি। সব মিলিয়ে অভাবগ্রস্ত সংসারে কিছুটা অভাব মোচন করতে গিয়ে ১০ দিন আগে কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র চাকরি নেয় মাহমুদ। কিন্তু মাহমুদের মৃত্যুতে আমাদের সব এলোমেলো হয়ে গেল।’

আজ বিকেল চারটার সময় উঠানের এক কোণে কথা হচ্ছিল মাহমুদের খালাতো ভাই মামুনুর রশীদের সঙ্গে। ওই সময় মর্গ থেকে লাশ এলে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়েন। মামুনুর রশীদ বলেন, ‘আমিও মজুরের কাজ করতাম বিদ্যুৎকেন্দ্রে। কিন্তু আমাদের মতো গরিবের জীবনের মূল্য নেই।’

গতকাল শনিবার সকালে বাঁশখালীর গন্ডামারায় সংঘর্ষের সময় পুলিশের গুলিতে পাঁচ শ্রমিক নিহত হন। আহত হন ৩ পুলিশসহ অন্তত ৩০ জন। মাসের ৫ তারিখের মধ্যে বেতন পরিশোধ, পবিত্র রমজান মাসে কর্মঘণ্টা ১০ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ৮ ঘণ্টা, শুক্রবার ৮ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ৪ ঘণ্টা করাসহ নানা দাবিতে বিক্ষোভ করেন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকাজের শ্রমিকেরা। বিক্ষোভের একপর্যায়ে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন কিছু শ্রমিক। তখনই পুলিশ গুলি ছুড়তে থাকলে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত পাঁচজনের মধ্যে নিহত মাহমুদ রেজাই একমাত্র বাঁশখালীর। অপর চারজনের বাড়ি চট্টগ্রামের বাইরে। আজ বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে সবার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও সংবাদ

দলিল লেখক এ.বি,এম. আজিজুল হক

ফেসবুকে আমরা

আজকের সেহরি ও ইফতারের সময়সূচী

.

সুরক্ষা অনলাই পোটার্ল

ইতিহাসের এই দিনে

Apps Download

Theme Customized By IT DOMAIN HOST